এ জীবন
যা কিছু অনাগত,
তাহাও অতীত।
যাহা আগুয়ান এইদিকে,
সেইসব
যাবে চলে।
এ জীবন নিয়ে
ভাবার কিছুই নাই।
কেবলই বসে থেকে,
সব কিছু
যেতে দেওয়া যায়। এখানে
পতন
কিছুতে নাই, নাই
আরোহণ। শুধু
বসে থাকা, না-থাকার মতোন।
এহেন ঢালু অথচ
সহজ দুনিয়ায়,
শ্যাওলার মতোন নিরীহ হিলভিউ
রোডে, গতিহীন গাড়িই
প্রশান্তি দেয়।
রিকশা ফেলে যায়
ছায়া— যদি
একদা বাঁকে পড়ে
যায় চেইন,
ছায়ার তলে বসে,
গেয়ে গান,
চেইন
ধীরে ঠিক করা যায়।
এ জীবন নিয়ে
তাই ভাবার কিছুই
নাই।
গ্রীষ্মে ঠাণ্ডা আর শীতের
গ্রীষ্মকাম
নিয়ে এদের মাঝামাঝি
হাঁটি, ফিরি
একা হুল্লোড় থেকে।
আমরা যা কিছু
চাই, তার
মাঝামাঝি কিছু হয়;— ঝড়
নেমে
আসে।
ভিজে গিয়ে,
বিপরীত বাতাসে শীর্ণ
এ শরীর
পষ্ট, —পষ্ট ক্রমশ
হয়।
বিপরীত বাতাসে গরীব,—শীর্ণ এ
শরীর গরীব ক্রমশ
হয়।
বিপরীত বাতাসে একাকী
মৌন
মানুষ, একাকী ক্রমশ
হয়।
তাও, আদতে কিছুই
নয়; নহে
ভালোবাসা, তবু ভালোবাসা, —
এহেন স্বজন রয়।
তাদের থেকে যেসব
বেদনা,
ভাবার কিছুই নাই। বেদনার
অধিক কিছু মানুষ।
নিয়নের তলে হন্টন
চালায়ে তাই,
এ জীবন নিয়ে
ভাবার কিছুই নাই।
ঘুমাবো প্রচুর
আজ যথার্থই ঘুমাবো
প্রচুর। ঝরে
যেতে রেখে এক
সিগারেট, র’বো
তাকায়ে অনর্থক।
জীবনের
যেদিকে ক্লান্তি;
ধোঁয়া আর ছাই
যেতে থাকে খসে,
সেখানে পাতবো হাত,
আমি সেখানে করবো
বাস।
না পুঁতে ভেতরে
কোনো কম্পন,
সেহেতু
না রেখে কোনো শব্দ,
কানে ঢুকে চলে
যায় গাড়ি-
ফ্যাক্টরি—
হেঁটে এসে দূর,
অহেতুক বসেছি
এখানে তাই; ছাই
আর ধোঁয়া যেথা
যেতে থাকে খসে;—
সিঁড়ির উপরে শুয়ে
খোলা মঞ্চের,
না দেখে তারকা
গগন, মুদে রেখে
চোখ, আর মুদে
রেখে শরীর,
আমি যথার্থই আজ
ঘুমাবো প্রচুর।
ঋজুতা
প্রভু,
এই কীর্তন ভালোবেসে,
তোমার অহম আমি
চিনি নাই।
নিচু হই ভালোবেসে,
আমার
অহম যখন আমি
চিনি নাই।
যেহেতু কেঁপেছে হৃদয়
আমার,
সেহেতু বেসেছি ভালো। আমি
তো
জেনেছি, কোথায় আসিয়া তুমি
হয়ে গেছো নিচু।
কে গাছ, বীজ,
আর গোড়ায় কে
পানি তার, বোঝার
কিছুই নাই।
ভালোবেসে আমি ঋজু হয়ে
হয়ে
আরো উঁচু হয়ে
যাই।
এইখানে নাই তোমার
প্রতি
একমুখী কোনো নতি;
আত্মার
সম্মুখে নিচুঢালু হয়ে আসি।
সেইখানে দেখেছি, সে তোমার
ভেতরে আছে চালিত
তোমার
দ্বারা,
সেইখানে দেখেছি আমি, শিশুর
মতো তোমার ভেতর
বসে ঋজু
হয়ে রয়েছি তোমারই
প্রতি।
ভালোবেসে তাই, ঋজু হয়ে
আমি
আরো উঁচু হয়ে
গেছি।
গাওয়ার ইচ্ছা নাই
(সাদী কাউকাব’কে)
সতত ঘিরে রাখে
আমাদের, যে
ফুলের আভাস, সেই
সূর্যমুখীর
গান গাওয়ার ইচ্ছা
নাই।
নারী-পুরুষের পাল
কেবল কাঁটা,
গোলাপের
গান গেয়েছে প্রভূত
স্বরে,— শীতপ্রকৃতির পথে।
প্রকৃতির নিয়মেই, ভাঙিয়ে বুকের
নাম, উভয়ের ধোঁকা
তারা
খেয়েছে প্রচুর।
নষ্ট বেলীরও কীর্তন
এথা হয়েছে
অনেক। ক্লান্তির
ভানে থেকে
বেলীঘ্রাণমাঝে, বিকল যন্ত্রের
দোহাই দিয়েছি
অনেক। শুয়ে
থেকে ঘ্রাণে, শরতে,
আমরা
গেয়েছি গান;— কোনো
সঞ্চারহীন,
আর দেহের সকল
পার্টস জঙ
ধরে জলে, পড়ে
গেছে খসে—
তবু কি শুনেছি
সেই ফুটে যেতে
থাকা সূর্যমুখীর গান?
বিকল দেহের পর,
মাগরিবে, ফুটা
ঐ ডুবিত বুকের
পরও, যে ফুল
সতত সূর্যমুখে;
ঘিরে থাকে আভাসে
আমাদের পাল ও
মাস্তুল,
সেই ফুল, সেই
গতি, সেই
সূর্যমুখীর গান আমাদের গাওয়ার
ইচ্ছা নাই,
—জীবনে যে আভাস
কখনো
পচে ঝরে ছেড়ে
যায় নাই, তার
সুর আমরা কখনো
তুলবো না,
জীবনে তুলিই নাই,
যেহেতু তার
গানে নিবেশ আমরা
কখনো
ভাবিই নাই।
ক্রন্দনদৃশ্য
জীবনে কাঁদি নাই আমি
কোনোদিন, তারপরও ঐ
পাহাড়ের থেকে শোনা গেছে
দূরের জীবনে আমার ভাঙা
ক্রন্দন।
চূর্ণ সেইসব বিলাপ ইথারে
গিয়েছে ভেসে,— না ছুঁয়ে জল,
উড়ে পাথারে, বাষ্পের অণুতে
গিয়েছে গেঁথে।
তথাপি পাহাড়ের তলায় রয়েছি
বসে, ছিঁড়েছি ঘাস, পাতা, ফুল
স্বাভাবিক।
যেনো পাহাড়ের তলাই রয়েছে
বসে, ভূমিদের দেহে নিজেকে
গেঁথে নিষ্ঠুরভাবে।
আকাশে পাখি উড়ে গিয়ে,
বাতাসে হেনেছে বাতাস, যেনো
সে দেখে নাই।
আসে অনেকেই, গায়ে বসে তার,
তবু
কেউ যেনো আসে নাই—
যেনো
দৃষ্টি রহিত তার।
জীবনে কোনোদিন আমি কাঁদি নাই।
ক্রন্দন খসা কোনো চোখ
তো আমার নাই।
তথাপি শোনা গেছে প্রপাত
আমার, আমার দেহের থেকে।
শোনা গেছে প্রপাতের ভেতর
প্রপাতরাশির ধ্বনি।
মাটির নিচে বাহিত নালা একদা
হয়েছে দৃশ্যমান, কোনো এক
বনের ভেতর বনে,
—যেনো এক খোলা রাস্তার ধারে।