সুমন সাধুর একগুচ্ছ কবিতা


একটি তরমুজের হত্যা

লাল থেকে গাঢ় লাল বুলেটিনে 
ঢেকে যাচ্ছে সোহাগী গা-গতর 
এমন অসম্ভব দৃশ্যে মানুষ ছুটছে রঙের নেশায় 
নেশায় শান দিয়ে তামাম এক দুনিয়া দেখাচ্ছে বটে 
যাই হোক, উপরের খোলস পার করে 
এ এক দীর্ঘ সিঁড়ি 
হাঁটছ তো হাঁটছই  
কিছুতেই পলক থেকে নেশারা নড়ছে না

সন্ধের 

প্রতিটা সন্ধের হাওয়া মুখর হয়ে ওঠে 
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয় বাড়ি ফেরার পথে 
রাস্তায় ছড়ানো ছেটানো কালো কালো মাথা 
কীভাবে ছাতার বোঝাপড়ায় ব্যস্ত 
কী আলোয় দেখা প্রতিবেশী ঘর 
ফিরি জন্মদিন নিয়ে, ক্যালেন্ডারের ওল্টানো 
পাতা দিনের হিসেবে মজবুত হয়ে যায় 
জন্মদিন এখানে নুইয়ে পড়ে 
ততটাই ঋণী হয়ে ওঠে আয়ু

সিনোপসিস- তিন 

বন্ধু আমাকে তার ডায়েরি পাঠায়। একা একা সমুদ্র-ধার কী কঠিন আওয়াজ তুলছে দ্যাখো। দ্যাখো, কী বিস্তৃত হিজলের বন। একটা বক উড়ে যাচ্ছে ছাইরঙের ডাল নিয়ে। সমুদ্রে শুধু ডানার ছায়া। বন্ধুর ডায়েরি উপচে সেইসব মোহময় দৃশ্য বেশ ভাবাচ্ছে। ধরো এইখানে একটা পিয়ানো সুর। একঘেয়ে করুণ। তবু আলগাভাবে বন্ধুর ডায়েরিতে চলে আসছি আমি আর আমার দুটো কাটা ডানা।


ঝিমরাতের অপেক্ষা 

লুকোনো বাড়ির পাশে ফাঁদ পেতে রেখেছি।
সেখানে, রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে যাবে সময়।

করুণ বয়সের রাজনীতি না জানা জীবটি
বেড়ালের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
টাল আর বাহানায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে
আমার নিজস্ব গা-ঘেঁষা আদুরে স্বভাব।

বেড়াল আর আমি রাজনীতির অঙ্ক কষব বলে
একে অপরের জন্য অপেক্ষা করছি।

আপেলে নখের দাগ

আপেলে নখের দাগ 
ফেটে যাচ্ছে চেরা মানচিত্র 
গলায় গলায় ভাব জমলে পাখির চোখে চোখ 
পড়লেই এ অভাবিত সংসারে 
আমায় সাজ শেখাও বাঁধা শেখাও 

আপেলে বেগমী নখ 
পেট থেকে নিচে আরেকটু নিচে 
ভেসে যাওয়া নৌকার ভাসানো পালক নিয়ে 
এসো, মানচিত্র চিবিয়ে এক দেওয়ালে পাখি আঁকি 
আঁকি বেগম আয়ু গাছ

সুমন সাধু
জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৪ নভেম্বর। 
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা, ভারত।
প্রকাশিত কবিতার বই- 
বিশ্বাস নাও করতে পারেন (এপ্রিল, ২০১৮), গওহরজান (নভেম্বর, ২০১৮) 

সম্পাদনা- আঙ্গিক পত্রিকা (২০১১ সাল থেকে)

SHARE THIS

Author: