ডাহুক
শ্রীলেখা--
আলোর সার্শিতে শিল্পকর্ম শিখতে
ঠোঁটের কাছে তুলে আনলে অন্ধকার
এক দিকে তোমার মন্দির
অন্যটায় আমার ধর্মের গেরস্থালি
আমি কী করে ভুলি---
তোমার দেহেই নিষিদ্ধ আছে
আমার ধর্মের পুরুষ
শ্রীলেখা-- শ্রীলেখা--
তোমার ধর্মের শরীরে-- সে আমি
প্রথম; নগ্ন বালকের ভেতর
আমার শৈশব দেখে কেঁদেছি
দেখেছি--
শাড়ীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা
ধর্মের গম্বুজ-- ক্ষীণ হতে হতে
নদী পথে চলে গেছে মহাসমুদ্রের দিকে;
তার আঁচড়ে মরা ঢেউয়ে--
আত্মঅহমে লাফিয়ে উঠে জন্ম-মৃত্যুর দর্শন
দূরের সেই ডাহুকের কাছে
জীবন এমনই এক কদমফুলের চিত্রকল্প মাত্র...!
বেনে বউ
অরণ্যের তরঙ্গ ভেদে
নেমে আসা
বেনে বউ
জোৎস্নার পাটিতে বসে
জীবন পোষ
আমার
ঘাট; রাখালির পালে
তোমারে পাই--
জোৎস্নার মতো সাদা শরীর
আর
সূর্যাস্তের মতন
উবে গেছে সিঁদুর
আমি
পাল বংশের ছেলে
জালের বুনন বুঝি না
পারি না তাঁতের ব্যাবহার
তোমার শাখা মুছা হাত
রাতের আড়ালে কত; সন্তানের খাবার
যুগাবে
আমি তো পাল বংশের ছেলে
ভেড়ার মাতৃত্ব দেখি;
দেখি পিতার ছন্দছাড়া মন,
কামের অশিল্প ব্যবহার
আমি তো পাল বংশের ছেলে
রুক্ষ মরুর দেশে;
ঘাসের ভেতর,
অরণ্যের ভেতর জীবন খুঁজি...
দোয়েল
বাতাসের সিঁড়ি বেয়ে
উড়ে আসে দোয়েল
বাদামি রঙের ছায়ার দিকে
পাতার কণ্ঠে-উপকণ্ঠে
দ্রোহের বাতাস
যেন
একটি লাশের উপর
উবুড় হয়ে আছে
শিশির ভেজা সকালের মুখ
একটি বাদামি রঙের ছায়ার দিকে
মুখ করে বসে আছেন ঈশ্বর
শুধু
পাতাদের কণ্ঠে-উপকণ্ঠে
আলোর বিচ্ছুরণ
যেন
আয়নায় মুখদেখে
ঈষৎ কণ্ঠে হাসছে ঈশ্বরী
আর
নারীরা
দোয়েলের নামে খুলে দিচ্ছে পাজামার গিঁট...
গাছ
একা একটা গাছ
আকাশের দিকে চায়
তার
পাতা জুড়ে জোৎস্নার দুধ
যেন যৌবন গড়িয়ে নামছে
আধমরা বয়সে
কেউ একজন
চাঁদের ডগায় বিড়ি ধরায়ে;
ফুঁকতে ফুকতে নির্জন হয়ে এলে
গাছটা কোথায় জানি হারায়া যায়
এই যে শহর
তুমি; তোমার ঠোঁট
আপেলের মতো লাল হয়ে আছে
তারপরো
শরীর থেকে খুলতে চাও অন্ধকার;
পোড়া চাঁদের ধোঁয়ার ভেতর
একটা গাছ কোথায় জানি হারায়া যায়
যেমন গতরাত তোমার শরীরে শৈশব
খুজতে যায়া
আমার শরীরে বার্ধক্য নেমে এলো
একা একটা গাছ তোমারে তাকায়
দেখে- শৈশবমরা দেহে
প্রাচ্যের ফুল ফোটে আছে; তার
খাড়া দুই নিপল জোৎস্নার সতীন।
মীন
গুনগুনী যে বাতাস ঝরে গেলো
গোধূলি বেলায়
তার গান থেকে আসছিল
প্রেম ও বিরহ মেশানো সুর
সূর্যের কাঁধ-ধরে সকাল দাঁড়ালে-
কোষ ছাড়ানো কলার মতো খুলে যায়
গোরখোদকের মন
সূর্যের আলো যতই উদ্ভাবনীয় মনে হোক না কেন
সে যায়
মৃত্যুর দিকে;
অথচ সময়
জীবনের কাছে কত অজুহাত রেখে যায়
আলোর কাছে আমি কতটা ঋণী?
ইতস্তুত প্রশ্ন-মাঝে ঢুকে যায় মুনীয়ার ডাক
ধ্যানের নিকেতন খোলে; শৈশব ঘিরে সে খেলছে;
চারপাশে আলো-প্রভা-প্রতিসরণ
আজ রাত্তিরে ঘুমাবো না কসম
তুমি এসো
পিয়ানোয় বাজাবো মিলেনের গান
সে সুরে অন্ধকার ভেঙে আসবে একটি পাখি;
তারপাশে আলো নিয়ে ধ্যানে যাবে একটি জিওল মাছ
বৃষ্টির র্পালারে
উপশহরের ঝরাপাতা গাছটির ডালবেয়ে
তোমার দোয়ারে দাঁড়াল সূর্য
তুমিও তার হাত ধরে চলে গেলে সূর্যাস্তে
সবে মাত্র ছেড়ে যাওয়া রেল গাড়িটির ধুলো
যখন ভীড় জমালো সূর্য স্টেশনে
এমন সময় রোজভিও হোটেলে তোমাকে দেখলাম
স্টুডিবেকারে বাড়ি ফিরছো;
তোমার সোনালী রঙের চোখ
যেন
চুরি হয়ে গেছে আমাতে
জিন্দাবাজার, রেলগেট ঘুরে
তোমার বি ব্লকের বাড়িতে খোঁজলাম
এখানে শুকনা পাতার মতো পড়ে আছে পদছাপ
তোমাকে না পেয়ে যেই দাঁড়িয়েছি বাস-স্টেশনে
রংধনু শাড়ি পড়ে তুমি নেমে আসছো বৃষ্টির পার্লার থেকে
তারপর আমি আর বাড়ি যেতে পারি না
আমার আর বাড়ি ফেরা হয় না কোন দিন
ধানফুল
তোমার খোঁপার জন্য আত্মহত্যার গলা বাড়িয়ে দিলো পেঁকে যাওয়া ধানফুল;
কিষাণীর পা যখন মুদ্রাময় আদিমতার খেলা খেলে- তোমার খোঁপা ভরে ওঠে
বোশেখী আমেজে। তৈলানলের সমীরণে; রেশমী শাড়ীর আঁচলের মতো সরু-চিকণ
অই চাঁদ, তোমার উনুন থেকে ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। জোনাকের অধিকারে নিদ্রামগ্ন
সমগ্র পৃথীবীতে জেগে আছি আমি এবং তুমি। জারুল ডালে ঝুলে আছে চাঁদ
চাঁদ ছুঁয়ে ঝরছে বৃষ্টি; বৃষ্টি ধুয়ে নামছে সমূহ নিরবতা- পৃথিবী প্রবাহে জাগছে
সূর্য এবং তদসংশ্লিষ্ট কবিতা।
ওপনিবেশ
জেসমিন--
তুমি লুকিয়ে নাও তোমার কাজল
কপালের টিপ
হাতের চুড়ি
তোমার মেঘরাঙা কাজল হত্যা করেছে বালকের মন
তোমার টিপ হৃদয়কে করেছে শশ্মান ভূমি
তোমার চুড়ি বোমারু-বিমানের মতো বাজে
জেসমিন--
প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ো না: গোরখোদক মেয়ে
তোমার দেহের খাদক আমি নই
জন্মের আগেই দাফন করেছো প্রেম
ব্রোথেলের বারান্দায় প্রেমকে করেছো বানিজ্য
শুধু
মন চেয়েছি কেবল চাই নি দেহের ওপনিবেশ
জেসমিন--
তুমিও স্মৃতির মতো নিকটে আসো
আর
গাছ দেখে বুঝে নাও পাখির ভালোবাসা
জাকারিয়া প্রীণন
জন্ম: ১০/১১/১৯৯৮
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায়।