যেই মানুষ কবিতা লেখে লোকে তারে কবি কয়, এখন কথা হইল কোনোভাবে দুই চাইরটা লাইন হাবিজাবি লেইখা ছাইড়া দিলেই কি কবি? আরে এই ভারতীয় চুল মার্কা কী সব লেখে কিছুইতো বুঝি না।
ইদানীং এইরকম কথাবার্তা প্রচুর শুনা যাইতাছে। এখন এই যে আপনে এই কবিতাডা বুঝলেন না, তার মানে কী দাঁড়াইল? এই লেখক কবিতা বইলা যেইগুলা গিলাইবার চেষ্টা করতাছে সেইগুলা আসলে মোটেই কবিতা হয় নাই, তাই তো? আবার এমনও হইতে পারে না যে - আপনে আসলে কবিতা পাঠের কোন যোগ্যতাই রাখেন না? জ্বী, ঠিকই পড়ছেন, যোগ্যতা তুইলা কথা কইছি। কী কইলেন - আপনের টাইম নাই? তাইলে হুদাই আপনে কবিতা পড়তে আইছেন ক্যান, অন্য কামে যান, সইরা খাড়ান, হাওয়া আসতে দ্যান।
সেই ছোট বেলায় পাঠ্য বইয়ে পড়েন নাই, কবি আল মাহমুদ চেতনার মণি বলতে কি বুঝিয়েছেন?
‘আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছো বিধির শক্তি হ্রাস!!’ - বিদ্রোহী কবি এখানে “বিধি' বলতে আসলে কি বুঝিয়েছেন?
এইগুলা পড়ছেন তো, ক্যান পড়ছিলেন, খালি পরীক্ষায় পাশ করনের লাইগা? কবিতা পড়ার, কবিতা বুঝার একটা প্রাথমিক ট্রেনিং আপনেরে দেয়া হইছিল তো। সেইসব আছিল সৃজনশীলতার ট্রেনিং। কিন্তু খালি পরীক্ষার খাতায় নম্বর তুলনের লাইগা আপনি মুখস্ত করছিলেন, আদতে শিখেন নাই কিছুই। এখন আমি এইরকম কইলে আমার দোষ? আমি খারাপ, অহংকারী, আঁতেল ভং ধইরা আছি, আসলে ভিতরে কিছু নাই, মাকাল ফল – এই তো?
‘আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছো বিধির শক্তি হ্রাস!!’ - বিদ্রোহী কবি এখানে “বিধি' বলতে আসলে কি বুঝিয়েছেন?
এইগুলা পড়ছেন তো, ক্যান পড়ছিলেন, খালি পরীক্ষায় পাশ করনের লাইগা? কবিতা পড়ার, কবিতা বুঝার একটা প্রাথমিক ট্রেনিং আপনেরে দেয়া হইছিল তো। সেইসব আছিল সৃজনশীলতার ট্রেনিং। কিন্তু খালি পরীক্ষার খাতায় নম্বর তুলনের লাইগা আপনি মুখস্ত করছিলেন, আদতে শিখেন নাই কিছুই। এখন আমি এইরকম কইলে আমার দোষ? আমি খারাপ, অহংকারী, আঁতেল ভং ধইরা আছি, আসলে ভিতরে কিছু নাই, মাকাল ফল – এই তো?
আপনে কইবেন – ক্যান! আমি অমুকের কবিতাতো বুঝি, উনি সহজভাবে সবকিছু লেখেন, সব একদম ফকফকা। আপনের কবিতা দুর্বোধ্য, বহুবার পইড়াও কোন মর্মোদ্ধার করা যায় না। আসলেই কি বহুবার পড়ছিলেন? সাহিত্যিক ডেভিড ফস্টার কি কইছে দেখেন-
‘সাহিত্য শুধু মগজের বস্তু নয়, হৃদয়েরও এবং অনুপাতে হৃদয়ের ভাগটাতেই বেশি পড়া উচিত’।
ব্যাপারটা এই রকমই, কবিতাও আপনে খালি চোখ বুলাইয়া গেলে হইব না তো, হৃদয় দিয়া অনুভব করতে হইব। আসলে পাঠক হি্সাবে আপনের উপর আমি ক্ষোভ ঝাড়তাছি না, কারণ হইলো, এই যে আপনের না বুঝা, বা না বুঝতে চাওয়া এর লাইগা দায়ী আমগো বর্তমান দিনকাল। আমরা এখন সব কিছু সহজে চাই, শর্ট কাট চাই। প্রযুক্তি চাইপা ধরছে জীবনডারে, সৃজনশীলতা কইমা গেছে মানুষের। হ মানে আপনের এত ভাইবা কাম কী স্যার, আপনে নাকে তৈল দিয়া ঘুমাইয়া থাকেন, আপনের হইয়া আমরা ভাইবা দিতাছি – বিজ্ঞাপনগুলাতো এই রকমই, তাইনা? সব চাইতে বড় কথা মানুষেরতো এখন এত সময় নাই, আলাদা কইরা কবিতা নিয়া ভাবার। লাইফে সফল হইতে হবে, এখন এই সফলতা যে আসলে কি বস্তু এইটা কেউ জানে না, তাই ছুটতেই আছে। এর মইধ্যে আবার দিনের একটা বিরাট সময় যায় ফেসবুকে এরে তারে লাইক, হাহাহা, মন খারাপ, ইশ দুঃখ পাইছি এইসব কামে ব্যয় করতে হয়। হাতে একটু বেশী সময় থাকলে – আহা দারুণ লেখনী, বাহ কি সুন্দর, আপনের তুলনা নাই এইসব লেইখা দায় সাইরা ফেলতে হয়। এই এতো ব্যস্ততার মইধ্যে মনোযোগ দিয়া কবিতা পড়নের টাইম কই! কথা সত্য, আসলেও নাই। তাইলে, দোষ কার? সময়ের, সফলতার, লড়াইয়ের, নাকি শুধুই কবির?
‘সাহিত্য শুধু মগজের বস্তু নয়, হৃদয়েরও এবং অনুপাতে হৃদয়ের ভাগটাতেই বেশি পড়া উচিত’।
ব্যাপারটা এই রকমই, কবিতাও আপনে খালি চোখ বুলাইয়া গেলে হইব না তো, হৃদয় দিয়া অনুভব করতে হইব। আসলে পাঠক হি্সাবে আপনের উপর আমি ক্ষোভ ঝাড়তাছি না, কারণ হইলো, এই যে আপনের না বুঝা, বা না বুঝতে চাওয়া এর লাইগা দায়ী আমগো বর্তমান দিনকাল। আমরা এখন সব কিছু সহজে চাই, শর্ট কাট চাই। প্রযুক্তি চাইপা ধরছে জীবনডারে, সৃজনশীলতা কইমা গেছে মানুষের। হ মানে আপনের এত ভাইবা কাম কী স্যার, আপনে নাকে তৈল দিয়া ঘুমাইয়া থাকেন, আপনের হইয়া আমরা ভাইবা দিতাছি – বিজ্ঞাপনগুলাতো এই রকমই, তাইনা? সব চাইতে বড় কথা মানুষেরতো এখন এত সময় নাই, আলাদা কইরা কবিতা নিয়া ভাবার। লাইফে সফল হইতে হবে, এখন এই সফলতা যে আসলে কি বস্তু এইটা কেউ জানে না, তাই ছুটতেই আছে। এর মইধ্যে আবার দিনের একটা বিরাট সময় যায় ফেসবুকে এরে তারে লাইক, হাহাহা, মন খারাপ, ইশ দুঃখ পাইছি এইসব কামে ব্যয় করতে হয়। হাতে একটু বেশী সময় থাকলে – আহা দারুণ লেখনী, বাহ কি সুন্দর, আপনের তুলনা নাই এইসব লেইখা দায় সাইরা ফেলতে হয়। এই এতো ব্যস্ততার মইধ্যে মনোযোগ দিয়া কবিতা পড়নের টাইম কই! কথা সত্য, আসলেও নাই। তাইলে, দোষ কার? সময়ের, সফলতার, লড়াইয়ের, নাকি শুধুই কবির?
এই সব ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদি আসার আগে অবস্থাটা কি আছিল? যারা কবিতার পাঠক তারা বই টই কিন্যা কবিতা পড়তো। পইড়া আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট এইসব অনুভব করবার চেষ্টা করতো। কখনো হয়তো কোন প্রিন্ট ম্যাগাজিনে বা পত্রিকায় সেই কবিতার রিভিউ বাইর হইতো, কিংবা কবিরই কোন সাক্ষাতকারে সেই কবিতা নিয়া আলোচনা হইতো। আর এখন হইল ডাইরেক্ট একশনের যুগ, কবি কবিতা লেইখাই তার ফেসবুক ওয়ালে এইটা টাঙ্গাইয়া দিতাছে, পাঠকও তাড়াতাড়ি পইড়া লাইক কমেন্ট কইরা ফটাফট জানাইয়া দিতাছে তার প্রতিক্রিয়া, পুরাই তিনমিনিটের ম্যাগী ইনস্ট্যান্ট নুডলস। তো এই ঝটপটের যুগে কোন কবির কোন দিন সময় খারাপ গেলে সেইদিন কোন কোন পাঠক এইরকম মন্তব্য কইরা বসে - কি লেখছেন কিছুতো বুঝি না। হইয়া গেল, এইবার বাকিটা ইনবক্সে - এ তারে কবে, এই লোক কি লেখে কিচ্ছু বুঝছ? সে ওরে কবে, আর কইস না, কি সব লেখে সব মাথার উপ্রে দিয়া যায়। আবার ও কয়, কিন্তু তুই দেখলাম লাইক দিছস। সে কয়, আহা লাইকতো এমনেই সবাইরে দেই, যা সামনে পাই তাতেই লাইক দেই। কিন্তু তুইতো দেখলাম, কমেন্ট করছস। ও হেহেহে কইরা হাইসা কয়, আরে ধুর, হুদাই কমেন্ট করি, পাম্প দেই আর কি একটু, বুঝোস নাই! এই কবিতার দুর্বোধ্যতার ইস্যুটা এখন বার্নিং ইস্যু। প্রতিদিন এই কেইস ঘটতাছে, প্রতিদিন নতুন নতুন ঝগড়া, মন কষাকষি চলতাছে। এইটার দায় কার? কবিরা না পাঠকের – এই বিতর্ক চলতেই থাকব অনন্ত কাল। এই ভেজাল আগেও আছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
এই দুর্বোধ্য ব্যাপারডা আসলে কী? মানে কোন শব্দ বোঝা যাইতেছে না, অর্থ জানা নাই? হইতেই পারে, বাংলা ভাষায় প্রচুর সমার্থক শব্দ আছে, এখন পাঠকের যেইটা জানা নাই, তিনি সেইটা জাইনা নিলেইতো ল্যাঠা চুইকা গেল। হ তার কিছুটা খাটনি করতে হইব, কিন্তু এই খাটনির ফলতো ভাল, একটা নতুন শব্দ শেখা হইল। আবার এমনওতো দেখা যায় সহজ ভাষায় একটা কবিতা লেখা হইল কিন্তু তার মর্ম কঠিন, মানে সহজ ভাষায় বিমূর্ত একটা কবিতা। এখন পাঠক যদি আইসা বলে এইটাতো কিচ্ছু হয় নাই, প্লেন রে আপনে ধাতব পাখি বলছেন এইটুকু বুঝছি, কিন্তু প্লেন রে প্লেন বললেইতো পারতেন। আর এইটাতো তাও বুঝছি, কিন্তু বাকি যে কি বুঝাইতে চাইলেন কিচ্ছুইতো বুঝি নাই। বুঝাইয়া বলেন। কবিতাতো কোন কালেই এক রকম আছিল না, কবিতা আধুনিক হইছে যুগে যুগে এইটা না বইলা বলা যাইতে পারে কবিতা সমকালীন হইছে, যুগের সাথে তাল মিলাইয়া কবিতা তার কলেবর বৃদ্ধি করছে এবং এখনো নতুন নতুন সৃষ্টি হইতাছে।
কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়া কথা বলতে গেলে আরও কিছু বিষয় নিয়া ভাবতে হইব। এই দেশে কবিতা প্রেমীও যেমন আছে আবার কবিতা নিয়া তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবার মানুষেরও অভাব নাই। কবিতো সমাজে এক হাস্যকর মানুষ, মানে যারে দিয়া কিছু হইতাছে না, সে-ই ছ্যাঁকা খাইয়া কবিতা লেখে। বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মানুষরে কিন্তু এতোটা তাচ্ছিল্য করা হয় না, যতোটা কবিতা লেখকরে করা হয়। এখন সেই সমাজে কবিতা দুর্বোধ্য লাগাটা বিরাট আশ্চর্যজনক কোন ঘটনাতো না। এই দেশের বেশীরভাগ কবিই লুকাইয়া কবিতা লেখা শুরু করে, লজ্জায় প্রথম দিকে কাউরে দেখাইতে পারে না, কারণ, সেই একটাই, কবিতা লেখে ফালতু লোক। সমাজে এইটা একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার। তার পরেও যে এত এত কবিতা লেখা হইতেছে, এইটা বিরাট আশার ব্যাপার।
নান্দনিকতা মানুষের বুকের ভিতর থাকে। তারে চাইপা রাখা যায় না, এক সময় ঠিকই সে পাখা মেলে।
নান্দনিকতা মানুষের বুকের ভিতর থাকে। তারে চাইপা রাখা যায় না, এক সময় ঠিকই সে পাখা মেলে।
কোনটা কবিতা হইল আর কোনটা কবিতা হইল না এই বিচার কে করবে? কবিতা লেখা যেমন কবির মননশীলতা, রুচি, পাঠ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে, তেমনি পাঠকেরও এইসমস্ত গুণ থাকাটাইতো কাম্য। ফেসবুকের কল্যাণে এখন সবাই কবি – এইটাও একটা বহুল আলোচিত বিষয়। কাকের সংখ্যার লগে কবির সংখ্যার তুলনা এই দেশে একটা বহুল জনপ্রিয় বিষয়। আমি কই কি, হতাশ হবার কিছু নাই। হ্যাঁ প্রচুর লেখালেখি হইতাছে, মান ও পরিমাণ দুইটাই এক লগে বাড়তাছে কিন্তু। সত্য হোক মিথ্যা হোক কোন কোন প্রশংসায় - উৎসাহে, একজন নতুন লেখক পরবর্তীতে আরও পড়াশোনায় মনোযোগী হইতাছে, উদ্ভাবনের নেশা চাইপা ধরতেছে তারে, সেও নিজেরে নিবেদিত করতেছে কবিতায়। বৈচিত্র্য বাড়তেছে, নবীনরা আইসা দারুণ দারুণ সব কবিতা লেইখা ফেলতাছে, পুরানরাও সেই নতুনের সাথে মিশ্যা আরও নতুন সৃষ্টিতে মুখর হইতাছে। ব্যতিক্রম যে নাই তা না, কেউ কেউ গেল গেল রব তুইলা ফেলতাছে। যেন কবিতা বিরাট উচ্চবংশের জিনিস, আর তাতে অচ্ছুতের পা পড়ছে। এরা আসলে ফুরাইয়া গেছে, এই তর্ক আরেকদিন। আশা যেমন আছে, শঙ্কাও আছে। নতুনদের মধ্যে অনেকে কয়দিন পরেই নতুন সৃষ্টির চাপ সামলাতে না পাইরা ঝইরা যায়। আবার কেউ কেউ মেকি প্রশংসায় অন্ধ হইয়া পরবর্তী ধাপে যাওনের লাইগা যতটা শ্রম এবং সময় দেয়া দরকার সেইটারে অর্থহীন মনে করে। একটা আমি কি হনূরে ব্যাপার আর কি, কি আর করা যায়, যুগটাই এমন, শো অফের, হ্যাঁ ভাই এইতো এই দিকে, এই যে আমাকে দেখুন, আমিই সেই...... জীবনানন্দ দাশের সেই উক্তিতো আর বৃথা যাইতে পারে না, ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’।
উপরে যা লেখলাম সেইটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা, এর দ্বিমত থাকতেই পারে। মোদ্দা কথা হইল আমি এইভাবেই কবি, কবিতা আর পাঠকরে নিয়া ভাবি। আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি মিল্যা যাবে এমন দুরাশা আমি করি না।
কবিতার জয় হোক।