সিলভিয়া প্লাথ, কাফকার সম্মোহনী ও অন্যান্য • তিয়াশা সুরভী






সিলভিয়া প্লাথ

জলের সাথে মিলেমিশে রক্ত গড়িয়ে গিয়ে সকালের পবিত্র আলো ছুঁয়ে দেয়। সে সময়ের সাথে সংঘর্ষ চলছে মানুষের।
মানুষ!
মানুষ কি চেনে অন্য মানুষকে?
মানুষের হাত, পা, চুল, প্রিয়তম চোখ এসকল যেন ভুল আয়াত হয়ে ঢুকে গেছে ইতিহাসের পাতায়।

মেয়ের লাশ শেষ বার দেখে হাত রাখে কফিনে।
সেই অতি প্রয়োজনীয় অথচ অপ্রিয় কফিন একজন বাবা বয়ে বেড়ায় চিরকাল।
ভাবে- এ হাত গড়েছিল একদিন সভ্যতার প্রাচীর
এ হাত এখন কিয়ামতের অপেক্ষা ছাড়া নিজের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে না।

আত্মহত্যার রঙ না কথিত সভ্যতার ব্লেডের ধার বেশি সুন্দর ?

সিলভিয়া প্লাথ, আপনার কবিতায় প্ররোচিত হয়ে কোন মানুষ কি মরেছিল? খুব সকালে?

কাফকার সম্মোহনী
নগ্ন সত্য আর মিথ্যের মাঝামাঝি মৃত্যু বেছে নেয়া কঠিন।

তবু
কবরে পৌঁছানোর রাস্তা দেখানো হচ্ছে।
আমার ডায়েরি আর স্ট্যানলির চিঠি গুলো সাথে দিতে বাধ্য করেছি।
ঠিক এই মুহুর্তে, চারজনের কাধের ওপরে শুয়ে, ঘুম ঘুম চোখে বুঝতে পারছি, স্ট্যানলিকে অনুবাদ করলে স্ট্যানলিই থাকে।

আমার মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে দুঃখ মেশানো হাসি। কার হাসি এতোটা তীক্ষ্ণ!
সে কি জানে আমি আর কবিতা লিখতে পারবো না, শ্লীল অথবা অশ্লীল শব্দে? আমাকে উপহাস করছো। আমার রেখে যাওয়া প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা বাক্য, প্রতিটা কবিতা তোমার স্বেচ্ছামৃত্যু ডেকে আনবে, আমি বিশ্বাস করেই আরামে শুয়ে আছি এখন।

ফরাসিরা একবার কাফকা পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল। অথচ কাফকার বানানো জগতে আমি রোজ বিকেলে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতাম। এখন একসাথে বসে সিগারেট ভাগাভাগি করতে পারবো ভাবতেই আরো দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে চাচ্ছি।

স্ট্যানলি,
আমাকে, এই আমার আমিকে নির্মাণে অথবা কাফকার কাছাকাছি পৌঁছে দেয়ায় ভূমিকা আছে তোমার একান্ত ব্যক্তিগত স্যুভেনিরের। অবশ্য তুমি আমাকে সম্মোহিত করনি। তবুও
তুমি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিও ট্রাফিকের তিন রকম আলো। (যদি পারো)

রেস্তোরা

নবী মূসা
অনেক মানুষের ভীড়ে
আপনার হাতটা যখন ছাড়লাম
পৃথিবীর ওজন বাড়িয়ে চাপিয়ে দেয়া হলো আমার ঘাড়ে।
ঘাড়ের তিলে চুমু খেয়েছিল যে, তাকে পাওয়া যাবে কফির দোকানে। চিনির দাম কম না বেশি এই নিয়ে আলোচনা চলছে তুমুল। এসব খুচরো আলোচনার সুবিধার্থে শহরে এতো দামী, কম দামী ক্যাফে, রেস্তোরাঁ।

ব্যাক্তিগত ঠোঁট থেকেই কেবল আমি চা পান করি। খেতে খেতে নতুন চশমাটা পরে শরীরের সমস্ত বাক দেখার আগেই অর্গাজম হয় কবিতার, কবিতায়!

বীর্যভেজা পাতার গন্ধে আমি লিখতে পারি না।

ভুল ঘুম

তীরবিদ্ধ বুক।

বুকের সমস্ত ভালোবাসা জড়ো করে, তোমার প্রাক্তনের জন্য বসে আছি, আজ দেড়শত বছর।

তোমার মুখোমুখি, আমি। অথচ মরে গিয়েছি গতরাতে সিগারেটের শেষ টানের সাথে।

মহাকাল থেকে অতীত ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় আমার শীত করছে।

প্রেমাতালের ওষুধ খেতে ভয় আমার। ভয়ংকর চোখ এখনো ছবিটায়। ধূসর হয়ে যাচ্ছে ধীরগতিতে ইতিহাসের আয়াত।

আর

নূর দেখেছিলাম যে চোখে সে চোখ পুড়ে যাচ্ছে ভুল ঘুমে।


ক্ষুধার্ত মানুষের গান

একদিন হাটতে হাটতে আমি চলে গিয়েছিলাম বব মার্লের তাবুতে। উনি গান লিখে আমাকে গেয়ে শোনালেন। দুঃখ দুর্দশা আর ক্ষুধার্ত মানুষের গান।
কতোকাল হাটতে থাকলে আমার বয়সের সমান ক্ষুধায় আমি নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবো বব?

এক কেজি করলার দাম আমি রেখে এসেছি বালিশের নিচে। চালের দাম? কিনি না তো। রাত হলে ভাতের হোটেলের সামনে বসে থাকি। বসেই থাকি। যখন ক্ষুধায় তৃষ্ণায় চোখে ঝাপসা দেখি আমি চলে যাই কোন আখড়ায়। গান শুনি। শুনি বেকারত্বের হার কমে গিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বসন্ত শেষ। এখন বর্ষাকালীন কদম সময়।
প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়
ভিজে যায় অসহায় রাত
ঘুমহীন লাল চোখ, অবহেলায় পকেটে রাখা দু'টাকার কয়েন
খামছে ধরে বুকের ভেতরকার তীব্র ক্ষুধা।

হে
দিকভ্রান্ত কবি
চিরকাল মাতাল আপনি
ছিলেন সেখানে?
বিভ্রমের সঙ্গম শেষে জ্বলে গেলো ক্যাটালগ
ইবাদত ব্যতিত আগুনে জ্বলে যাওয়া পাপ
আপনি বিশ্বাস করতে পারেন, আপনার ইবাদতের সাক্ষী মরে গিয়েছে আপনার মৃত্যুর আগেই।
তবে স্পষ্ট ঈমান আনুন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের।
নিজের লাশ আর কতোকাল কাঁধে বয়ে বেড়াবেন?

আমি আপনার ভাবনা, ভাবনা অব্দি না এনে, হেঁটে যেতে চাই ভ্রান্তিময় সময়ে। সময় যেখানে কবিতা, কবিতা যেখানে সময়। ওখানে চুমু খেতে প্রশ্ন প্রশ্ন খেলায় আমার আগ্রহ নেই। আগ্রহ আছে টকটকে লাল ঠোঁটে। দীর্ঘতম চুমুর রক্ত আমি হাটবাজারে বিক্রি করে ট্রেনে চেপে বসবো।

কারণ
বব জানালো -
বৃষ্টি থেমেছে
ম্যাপল পাতা ভিজে গেলে নরকের আগুন নিভিয়ে দেয়া হয়।
ঘুমোতে দেয়া হয় রাত প্রহরীকে।
বিভ্রান্তিকর অস্থিরতার কথা কেউ আর অনেকদিন বলে না।

বব, ক্ষুধা পেটে সিগারেট আমার দারুণ লাগে
লাইটার হবে?
নরকের আগুনটা, বড্ড মলিন।
সিগারেট ধরানোর মতো মহৎ কাজে লাগে না।
এগুলো বলার সময় এখন আমার হবে না।

করলা। করলা কিনে বাসায় ফিরতে হবে।
লাল গোলাপ পাশে নিয়ে ঘুমাতে হবে।
মানুষ মানুষকে মারছে এসব খবর না শুনে ঘুমাতে গেলে গোলাপের গন্ধ প্রাক্তনের কথা মনে করায়।
আমি চিৎকার করে 'দিকভ্রান্ত কবি' কে ডাকতে গিয়েও কোনদিন ডাকিনি, জানেনি কেউ, বলবো না তাঁর কথা কাউকে কখনোই।

বিষন্ন সুরে ক্ষুধামুক্তির কোন গান হবে নাকি, বব?


"Don't Worry
About a Thing
Cause Every Little Thing gonna be Alright"

SHARE THIS

Author: